চাহিদা না থাকায় অর্ধেকের বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র , থেকে বিদ্যুৎ নিতে পারছে না সরকার। কিন্তু ভাড়া আমাকে দিতে হবে। গত
এক দশকে সরকার শুধু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভাড়া বাবদ ৬০ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। বিদ্যুৎ খাতের মতো গ্যাস খাতেও
সরকারের ভুল পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। অনুসন্ধান ও উৎপাদনের ওপর জোর না দিয়ে উচ্চমূল্যের তরলীকৃত
প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা হচ্ছে। ফলে বারবার বাড়ছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম। আর বাড়তি খরচের বোঝা পড়ছে
গ্রাহকের ওপর।পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ইতোমধ্যে জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ
এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। 21 মার্চ থেকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে গণশুনানি শুরু
হবে। এরপর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে শুনানি হবে। এর আগে নভেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছিল। এভাবে
নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। সামনের দিনগুলোতে সাধারণ মানুষের জন্য কোনো সুখবর নেই। উল্টো
চাহিদা না থাকায় অর্ধেকের বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র
জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে।বেসরকারি নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বিভিন্ন সময়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাস
খাতে সরকারের নীতি ও পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। নতুন করে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন
তারা। সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা নির্ধারণে সরকার ভুল
করেছে। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার বিপরীতে চাহিদার ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। ফলে সরকার অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে অর্থ ব্যয়
করছে তা ভোক্তাদের কাঁধে পড়ছে। ভোক্তার উপর অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে সমস্যা সমাধান হবে না, এর জন্য ভোক্তা দায়ী নয়।
অন্যদিকে গ্যাস আমদানিতে সরকারকে নেতৃত্ব দিয়েছে একটি মহল। সরকার বেশি দামে গ্যাস আমদানি করে ভোক্তাদের কাছ
থেকে এই খরচ নিতে চায়।বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভাড়া বাড়ছেবিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী ভিত্ততে
আইপিপি (স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী) কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করে। নির্মাণের আগে এসব কেন্দ্রের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি
করতে হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ক্ষমতা নিতে না পারলে কেন্দ্রগুলোকে ক্যাপাসিটি ভাড়া দিতে হয়, যা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বা কেন্দ্র
ভাড়া নামে পরিচিত। তাই অলস কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়তে থাকলে বিদ্যুৎ না কিনে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হবে
পিডিবিকে পিডিবি সূত্রে জানা গেছে
পিডিবিকে পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, 100 মেগাওয়াট প্ল্যান্টের ভাড়া (যদি উত্পাদিত না হয়) বছরে প্রায় 90 কোটি টাকা। বড়
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভাড়া আরও বেশি। উদাহরণস্বরূপ, 1,320 মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ না পাওয়ায়
পিডিবিকে প্রতি মাসে 130 কোটি টাকা দিতে হয়। গত বছর কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে প্রতি ইউনিট খরচ হয়েছে ৬ দশমিক ৮
টাকা। গত বছর ছিল ৭.৩ টাকা। সঞ্চালন লাইন নির্মাণ না হওয়ায় এ কেন্দ্র থেকে পূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ নেওয়া হচ্ছে না
।সিপিডি বলছে, বিদ্যুতের চাহিদা প্রজেক্টে ত্রুটির কারণে শুরু থেকেই অতিরিক্ত ক্ষমতা বেড়েছে। আবার উৎপাদন ক্ষমতার
সমানভাবে সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন নির্মাণ করা যায়নি। সরকার বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র আনতে না পারায় মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখতে হচ্ছে। 920 মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এই ধরনের বারোটি স্বল্পমেয়াদী বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখনও চালু আছে।দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি হিসেবে গ্যাস, কয়লা, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল প্রধানত ব্যবহৃত হয়। এবার পিডিবি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে বলেছে, গ্যাস সংকটের কারণে অধিকাংশ গ্যাসভিত্তিক অয়েল ৫০০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে পিডিবিকে। তাই পাইকারি পর্যায়ে ৭৪ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।